কৃষি তথ্য সার্ভিস আমার চাকরিকালের একটি উজ্জ্বল নাম, যা চাকরি থেকে চলে আসার পরও এখনো আমি মনে করি। আমি আমার চাকরি জীবনে প্রায় সম্পূর্ণ সময়েই এ সংস্থায় কাটিয়েছি। বিগত ১৯৭৭ সনে চাকরিতে এসে পেনশন পর্যন্ত মাত্র কয়েক বছর ঢাকার বাইরে কাটালেও পুরো সময়ই এ সংস্থায় কাজ করেছি। এখানে আসার জন্য যার অবদান সবচেয়ে বেশি প্রথমেই যার কথা বলতে হয় তিনি হলেন কৃষিবিদ মরহুম আ কা মু গিয়াস উদ্দীন মিল্কী স্যার। তিনি তখন এ সংস্থার প্রধান হিসেবে কাজ করছিলেন। তিনি শুধু আমাকে এখানে কর্মকর্তা হিসেবে নিয়েই আসেননি সাথে সাথে এ সংস্থার কাজের ধরন, নিয়মপদ্ধতি যাবতীয় সর্বাধুনিক তথ্য প্রচার বিষয়ে আমাকে জ্ঞান দিয়েছেন, যা কৃষির বিভিন্ন সম্প্রসারণবিষয়ক কাজকর্মের সাথে সম্পৃক্ত।
এ বিভাগের কাজকর্ম ছিল কৃষিবিষয়ক বিশাল কর্মকা-গুলো হাতে-কলমে কৃষক ভাইদের কাছে পৌঁছে দেয়া। এজন্য এ সংস্থার কার্যক্রম পরিচালনার ব্যাপারে ব্যবহার্য ছিল যেসব তা হলো কৃষির ওপর প্রকাশিত বিভিন্ন ধরনের কৃষিবিষয়ক প্রকাশনাসামগ্রী, বেতারের মাধ্যমে কৃষিবিষয়ক তথ্য প্রচারণা ও চলচ্চিত্র, টেলিভিশন প্রভৃতি শ্রবণ-দর্শনসামগ্রীর মাধ্যমে এ সংস্থার কৃষি তথ্য প্রচার করা।
এসব তথ্য প্রচার কার্যক্রমের ব্যাপারে ওই সময় আমার জ্ঞান যদিও অতি সামান্য ছিল। তারপরও মিল্কী স্যারসহ অন্যান্য জ্ঞানী কৃষিবিদের সাহচর্যে আমি ক্রমে এসব বিষয়ে পারদর্শী হয়ে উঠি। এজন্য প্রথমেই যে তথ্যসামগ্রীর বিষয়ে মনে আসে তা হলো প্রচার ও প্রকাশনাসামগ্রী। এর মধ্যে ছিল মাসিক কৃষিকথা, মাসিক সম্প্রসারণ বার্তা ও অন্যান্য কৃষিবিষয়ক লিফলেট, বুকলেট, পুস্তিকা এসব। এছাড়া বার্ষিক কৃষি ডায়রি, ক্যালেন্ডার ও কৃষি পঞ্জিকার কাজও নিয়মিত হয়ে আসছে। মাসিক কৃষিকথায় লিখেছে দেশের বিশিষ্ট কৃষি লেখক, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিশিষ্ট কৃষি শিক্ষকরা। এছাড়া কৃষি বিজ্ঞানী ও কৃষির বিভিন্ন পেশায় চাকরিরত অভিজ্ঞ জ্যেষ্ঠ কৃষিবিদদের বিভিন্ন রচনাও এ পুস্তকে স্থান পেয়েছে। এ পত্রিকায় সদ্য আবিষ্কৃত বিভিন্ন ধরনের গবেষণালব্ধ বিষয়ের ওপর রচনারও সমাহার রয়েছে। কৃষিকথা একটি কারিগরি জার্নাল এবং এ পত্রিকা গ্রাহকের মাধ্যমে বিক্রয় ও বিতরণ করা হয়। গ্রাহকের কাছ থেকে সংগৃহীত এ অর্থ সরকারি রাজস্ব খাত হিসেবে সরকারি তহবিলে জমা হয়। এর জন্য প্রচুর সৌজন্য কপিও ছাপা হতো। এত প্রচুরসংখ্যক কৃষিকথা কৃষি তথ্য সার্ভিসের মাধ্যমে এর আগে বেসরকারি প্রেস ও সরকারি প্রেসগুলো থেকে ছাপা হতো। এছাড়া অন্যান্য কৃষিবিষয়ক সরকারি প্রকাশনাও এ সংস্থা থেকে প্রকাশ করা হতো। এসব কার্যাবলির প্রকাশিত কার্যক্রমের বিষয়গুলো বিবেচনায় এনে এ সার্ভিসে একটি অফসেট প্রেস মেশিন ও এর অন্যান্য ছাপাবিষয়ক যন্ত্রপাতি এখানে স্থাপন করা হয়। পরে বিদেশি সাহায্য-সহায়তায় এ সংস্থায় সর্বাধুনিক মেশিনাদিও স্থাপন করে। ফলে এখানে ছাপার পরিমাণ প্রচুর বৃদ্ধি পায়। এসব কারণে ফার্মগেটে এ সংস্থার একটি প্রেস ভবন তৈরি এবং বিভিন্ন ধরনের আধুনিক মেশিন নিয়ে এখানে কাজ শুরু করে। এ ছাপাখানায় তখন রাত দিন কাজ চলত। পরে এ এলাকায় খামারবাড়ি নামে কৃষির জাতীয়পর্যায়ে কার্যক্রম শুরু হয়। কারণ এখানেই কৃষির কেন্দ্রীয় দপ্তরগুলো নিয়ে বিশাল ভবন তৈরি হয়। এতক্ষণ আমার প্রতিষ্ঠানের কাজের কথা বললাম। এবার আমার নিজের কথা বলি। আমাকে আমাদের অফিস প্রধান মিল্কী স্যার এ সংস্থায় নিয়ে আসেন ১৯৮০ সনে। তখন আমাদের প্রধান কার্যালয় ছিল পুরান ঢাকায় রামকৃষ্ণ মিশন রোডে। আমি এখানে আরও ২ থেকে ৩ জন তথ্য কর্মকর্তার সাথে কাজ করতাম। যদিও আমি ছিলাম তাদের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ কর্মকর্তা তবুও আমি বড় ভাইদের আদরে এখানে কাজ করেছি। তখন আমাদের কাজের সময় ছিল সকাল ৭.৩০ মি. থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত। এভাবে কয়েক দিন আসা-যাওয়া করে সময় কাটালাম। পরে এক দিন মিল্কী স্যার আমাকে ডাকলেন তার কক্ষে, তিনি ছিলেন অফিসের প্রধান। তিনি বললেন, মানজুমুল তুমি বিকেলে বাসায় গিয়ে কী করো? আমি বললাম গল্পগুজব করি। কোথায়? আমি উত্তর দিলাম স্যার বিভিন্ন স্থানে বন্ধুদের সাথে। বললেন, আমি বিকেলে গল্পগুজব করার সুন্দর একটি জায়গা করে দেব। তুমি সেখানে যাও ভালো লাগবে। বললেন, খুব সুন্দর জায়গা, প্রাকৃতিক পরিবেশ সুন্দর। এছাড়া সেখানে চা, মুড়ি, বিভিন্ন ধরনের ভাজা খেতে পারবে। আমি তার কথায় রাজি হলাম ও ওই দিন গল্পগুজব করার জন্য তিনি সেখানে নিয়ে গেলেন। সে জায়গা ছিল ফার্মগেটের আমাদের প্রেস ভবন এলাকায়। তিনি বললেন, আমরা এ সার্ভিসের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা এখানে বিকেলে এসে গল্পগুজব করব চা, মুড়ি খাবো। এখানে এসেই দেখলাম স্যার আমাকে একটি ভালো জায়গাতেই গল্পগুজব করার জন্য এনেছেন। এখানে প্রচুর কর্মচারী-কর্মকর্তা ছাপার কাজ করছেন। তারা বিভিন্ন ধরনের কৃষিবিষয়ক ম্যাগাজিন ও অন্যান্য জার্নাল প্রকাশনাসহ নিয়মিত পুস্তক-পুস্তিকা প্রকাশের কাজ করছে। আমি বুঝতে পারলাম মিল্কী স্যার আসলে আমাকে প্রেসের কাজের তদারকির ভারই আমার ওপর দিয়েছেন। তবে আমার বর্তমান গল্পগুজবের জায়গাও খুবই সুন্দর। আমি প্রতিদিনই বিকেলে এখানে এসে চা, মুড়ি খাই। এখানে কর্মকর্তাদের সাথে নতুন ধরনের কাজ করতে বেশ ভালোই লাগছে। পরে ঢাকার আশপাশে ও ঢাকার বন্ধু কর্মকর্তাদের জন্যও জায়গাটি আস্তে আস্তে বড় একটি গল্পগুজবের জায়গায় পরিণত হয়ে যায়। ঢাকার বাইরে কর্মরত বন্ধুরা যারা মাঝে মধ্যেই ঢাকায় আসেন তারাও এখানে বিকালে আসেন বসে সময় কাটিয়ে যান। বেশ ভালোই সময় যাচ্ছিল।
তাছাড়াও কৃষি তথ্য সার্ভিস পরিচালিত বিভিন্ন দেশি-বিদেশি সংস্থার অনেক প্রশিক্ষণে আমি অংশগ্রহণ করি। এগুলো ছিল কৃষি সম্প্রসারণ, আধুনিক মুদ্রণ, চলচ্চিত্র তৈরি ও এর মাধ্যমে তথ্য প্রচার, শ্রবণ মাধ্যমে ও শ্রবণদর্শনের মাধ্যমে কৃষি তথ্য তৈরি এবং কৃষি সম্প্রসারণ প্রচার বিষয়ে কাজ করা ফলে এসব বিষয়েও আমি দক্ষ হয়ে ওঠি। এ অবস্থায় একদিন প্রেস বিল্ডিং এলাকায় আমাদের আরও একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা আমার কাছে চা, মুড়ি খেতে এলেন। যার কথা না বললেই হয় না তিনি হলেন কৃষিবিদ ফজলুর রহমান স্যার। তিনি কৃষির সব ধরনের তথ্য বেতার, টিভি, চলচ্চিত্র প্রভৃতির মাধ্যমে প্রচারের সার্বিক দায়িত্বে ছিলেন। তিনি আমাকে বললেন, তুমি তো প্রচুর শ্রবণ, শ্রবণদর্শন, চলচ্চিত্র প্রভৃতি বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিয়েছ। তুমি তো আরও একটি কাজ করতে পার। অমি বললাম, কী স্যার? স্যার বললেন, বেতারে কৃষিবিষয়ক সময়োপযোগী তথ্য প্রচারের জন্য কথিকা তৈরি করা। তা হলো দুপুরে বেতারে জাতীয়ভাবে ও আঞ্চলিকভাবে এবং সকালে আঞ্চলিকভাবে এসব কথিকা ও নাটিকা হিসেবে প্রচার করা। আমি তার কথায় রাজি হলাম এবং এরপর থেকে বেতারে এসব কথিকা লেখতে শুরু করলাম। এরপর আমরা কৃষি তথ্য সার্ভিসের বেশ কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী ও কুশলীদের সহায়তায় আমি সকালে বেতার নাটিকা প্রচারের উদ্যোগ নেই। এজন্য আমি প্রতিদিন সমসাময়িক নাটিকা রচনা করি ও তা কর্মকর্তা-কুশলীদের সহায়তায় প্রচারের ব্যবস্থা করা হয়। এখানে আরও নাটিকার জন্য প্রচুর নতুন উৎসাহী কুশলীদের সমাহার হতে থাকে। প্রতিদিন নতুন কথিকা প্রচারের ব্যবস্থাও গ্রহণ করি। আমাদের এসব কার্যক্রম আমার দপ্তর এবং কৃষিবিষয়ক অন্যান্য দপ্তরের কাছে খুবই গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছিল। ফলে কৃষি তথ্য সার্ভিসের বিভিন্ন নতুন নতুন কার্যক্রম এবং এ বিষয়ক কর্মকর্তাদের সাথে আমার পরিচিতি ঘটে। আমার দিন বেশ সুন্দরভাবেই যাচ্ছিল। এসব কাজের মধ্যে আমাদের প্রেস বিল্ডিংয়ের পাশের ফাঁকা জায়গায় কৃষি কমপ্লেক্স ভবন নামে একটি বিশাল ভবনের গোড়াপত্তন হয় এবং শিগগিরই এ ভবন তৈরি হয়। প্রচুরসংখ্যক প্রকৌশলী ও কারিগরি জনবলের সহায়তায় এ ভবনটি তৈরি হয়ে দেখার মতো হিসেবে পরিণত হয়। অল্প কয়েক দিনের মধ্যেই এ ভবনে কৃষি সম্প্রসারণ ও প্রচারের অন্যান্য দপ্তরগুলোর জাতীয়পর্যায়ের কার্যালয়গুলো স্থান পায়। এ ভবনে আমাদের কৃষি তথ্য সার্ভিসের মূল ভবন স্থান পায় সবার সম্মুখে। কেননা এ কৃষি কমপ্লেক্স ভবন তৈরির গোড়াপত্তনই হয়েছে কৃষি তথ্য সার্ভিসের প্রদত্ত অর্থে।
অন্য দপ্তরগুলো এ ভবনে চলে আসার পরে প্রচুর লোকজনের সমাগম হয়। আমরা এ ভবনে বেসরকারি একটি শিল্পগোষ্ঠী গঠন করি। এতে সদস্য ছিলেন জনাব আফতাব, জনাব নাছির উদ্দীন ভূঞা, জনাব নূর হোসেন, জনাব শরীফ উল্লাহ্ এবং আরও অসংখ্য কৃষিবিদ ও বন্ধুরা। আমি এ শিল্পগোষ্ঠীর সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব নেই। আমাদের সময় কৃষি সচিব হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন মরহুম এজেডএম ওবায়দুল্লাহ্ খান। তিনি একজন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব। তার লেখা অসংখ্য কাব্যগ্রন্থও রয়েছে ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের প্রতি তার আলাদা আকর্ষণ ছিল। তাছাড়াও দেশের অসংখ্য সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সাথেও তার দীর্ঘ দিনের যোগাযোগ ছিল। এসব বিষয় বিবেচনা করে আমাদের এ শিল্পগোষ্ঠীর বিজয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে এ ভবনে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করার উদ্যোগ নেই। আমাদের তৎকালীন কৃষি সচিব মহোদয়কে এ অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত হতে অনুরোধ জানাই। তিনি তা সাদরে গ্রহণ করেন। আমরা এজন্য একটি ছোট পুস্তিকাও প্রকাশ করি। আমরা এ অনুষ্ঠানটির আয়োজন করি ফার্মগেটের খেজুরবাগানে কৃষি কমপ্লেক্স ভবন এলাকায়। এ ব্যাপারে সে সময়ের কৃষিবিষয়ক প্রতিষ্ঠানগুলো আমাদের আর্থিক ও সার্বিকভাবে বিশেষ সহায়তা করেছিল। তবে সর্বাধিক যে প্রতিষ্ঠানটি আমাদের সাহায্য ও সহায়তা দিয়েছিল তাহলো কৃষি তথ্য সংস্থা। আমরা আমাদের জনবল নিয়ে এখানে একটি সাংস্কৃতিক কার্যক্রমের আয়োজন করি। ১৯৮২ সনের ১৭ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৬টা ৩০ মি. আমরা আমাদের এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করি। এ উপলক্ষে আমাদের অনুষ্ঠিত কর্মসূচি ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি কৃষি সচিব মহোদয় খুবই আন্তরিকভাবে উপভোগ করেছিলেন। কারণ আমাদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানটি খুবই দৃশ্যমান হয়েছিল। এছাড়া এ কাজের জন্য আমাদের সংগৃহীত অল্প কিছু অর্থ দিয়ে আমাদের প্রকাশিত ম্যাগাজিনও সুন্দর মনঃপূত হয়েছিল। এ পত্রিকায় আমাদের কৃষিবিষয়ক সামগ্রিক তথ্যাবলি ও দেশব্যাপী কৃষিকার্যক্রমের সার্বিক কার্যক্রম বিস্তারের ব্যাপারে কৃষিবিষয়ক দপ্তর প্রধানরা সুন্দর ও সমসাময়িক লেখনি দিয়ে এ পুস্তিকাকে সমৃদ্ধ করেছিলেন। এছাড়া আমাদের কিছু বন্ধু কৃষিবিদ ও অন্যান্য কার্যক্রমে চাকরিরত বন্ধুরা বেশ কিছু গল্প, কবিতাসহ অন্যান্য রচনা দিয়েও একে আকর্ষণীয় করেছিলেন। তবে যে কথা না বললেই নয় তাহলো পুস্তিকার জন্য আমার কিছু বন্ধু কৃষিবিদ ও অন্যান্য বন্ধুরা মিলে আমরা এ পুস্তিকার একটি নতুন নাম নির্বাচন করি আর তা হলো ‘খামারবাড়ি’।
এ ব্যাপারে আমাদের কৃষি তথ্য সংস্থার কলাকুশলীরা সার্বিকভাবে সহযোগিতা করেছিল। কিন্তু আমাদের তৎকালীন কৃষি কমপ্লেক্স ভবনের বেশ কিছু দপ্তর প্রধানের কাছে নামটি মনঃপূত হয়নি। এতে তাদের সাথে আমাদের কিছুটা মতভেদ প্রকাশ পায়। তারা আমাদের উৎসাহ দেখে আমরা যাতে এ নামে প্রকাশ করতে না পারি সে চেষ্টা করে। সেজন্য তারা বিভিন্ন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে মন্ত্রণালয়সহ আমাদের অন্যান্য কাজে বাধা দেয়ার জন্য দপ্তরের কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন গুপ্তচর নিয়োগ করেন। যাতে আমরা এ পুস্তিকাটি খামারবাড়ি নামে প্রকাশ করতে না পারি। আমাদের এ পুস্তিকায় আমার বন্ধু কৃষিবিদ সৈয়দ জয়নুল আবেদীনের খামারবাড়ি নামে একটি সুন্দর ও আকর্ষণীয় চতুর্দশপদী কবিতা প্রকাশ পায়। কবিতাটি লিখিত হয়েছিল রবার্ট ফ্রস্ট নামে এক মার্কিন চারণ কবির লেখা ফার্মহাউস কবিতার ছায়া অবলম্বনে। যেহেতু আমাদের অনুষ্ঠানটি ছিল বিজয় দিবস অনুষ্ঠানের স্মরণে তাই আমাদের স্বাধীনতার জন্য বিজয়ের আনন্দ ও সে সাথে তখন গ্রামের কৃষকের বাড়িঘর, মাঠের বিভিন্ন ফসল ক্ষেত, গাছপালা ও অন্য সবকিছুর কথা এ কবিতায় বলা হয়েছে। আমাদের অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি জনাব ওবায়দুল্লাহ খানের কাছে কবিতাটি খুবই ভালো লেগেছিল। তিনি একজন কবি মানুষ এবং কবিতাটির বিষয়বস্তু, আলোচনা প্রভৃতি তিনি খুবই গভীরভাবে গ্রহণ করেছিলেন। তিনি কবিতাটির প্রতিটি কথা মর্মে মর্মে উপলব্ধি করেছিলেন। এছাড়া খামারবাড়ি কথাটিও এ ভবনের সব কর্মকাণ্ডের সাথে এক করে অনুধাবন করেছিলেন। এভাবেই আমাদের কৃষি সচিব মহোদয় এ ভবনের নামকরণ খামারবাড়ি নামেই প্রতিষ্ঠিত করবেন বলে পরে আশা ব্যক্ত করেন। যদিও আমাদের কৃষি বিভাগের সব দপ্তর প্রধান ও জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের ইচ্ছা ছিল এটি কৃষি কমপ্লেক্স ভবন নামে প্রতিষ্ঠিত হবে। সে হিসেবে কৃষি সচিব মহোদয়কে তারা বিশেষভাবে অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু সচিব মহোদয় তার ইচ্ছাই তাদের কাছে জ্ঞাপন করেন এবং সবাইকে একসাথে কাজ করার আহ্বান জানান। পরে এ ভবনটি খামারবাড়ি নামেই প্রতিষ্ঠা লাভ করে। এগ্রিকমপ্লেক্স ভবনটি খামারবাড়ি নামেই সবার কাছে পরিচিতি পায়। ফলে আমরা যে কয়েকজন বন্ধু কৃষিবিদ, খামারবাড়ি নামটির প্রতি আমাদের মনের ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলাম তা প্রথমে কিছু বাধা পেলেও পরে এ নামেই ভবনটি পরিচিতি পায়। এজন্য আমাদের বন্ধু কৃষিবিদ ও বন্ধুদের মধ্যে আনন্দের ফোয়ারা বয়ে যায়।
পরে শুধু ঢাকা মহানগরীর কেন্দ্রীয় কৃষি কার্যালয়টিই নয় সারা দেশে জেলা, আঞ্চলিক ও উপজেলাপর্যায়ের কৃষিবিষয়ক দপ্তরগুলো ‘খামারবাড়ি’ নামে পরিচিতি লাভ করে। এখন এসব দেখে আমরা খুবই আনন্দিত ও পুলোকিত হই। আমাদের কৃষি বিভাগের ছোট ছোট কৃষিবিদ ও চাকরিরত ভাইবোনেরা অনেকেই এ বিষয়টির ব্যাপারে জানেন না। তাই আমি এ ব্যাপারে কথাগুলো বললাম ও আমি আমার কথাগুলো জানিয়েও আনন্দিত হলাম। সে সাথে কৃষিকথার ৭৫ বছরে পদার্পণ উপলক্ষে বিশেষ সংখ্যা প্রকাশের উদ্যোগকেও সাধুবাদ জানাই।
লেখক:
কৃষিবিদ মানজুমুল হক*
* সাবেক উপপরিচালক, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, খামারবাড়ি, ফার্মগেট, ঢাকা-১২১৫